সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দুটি কবিতা : স্বর্ভানু সান্যাল


মেখলা,তুমি

মেখলা, তুমি একলা বিকেলে আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজেছিলে
               মনে পরে?
মেখলা, তোমার হাতের নরমে আমার হাতকে আশ্রয় দিয়েছিলে
              যত্ন করে।

মেখলা, তুমি অষ্টমীতে নীল শাড়িতে আকাশ হয়েছিলে
                                                 মনে আছে?
মেখলা, তোমার কস্তুরী মৃগী গন্ধ পেতে আসতে চেয়েছিলাম
                                                 আরো কাছে।

মেখলা, তুমি স্নানশেষে খোলা চুলে কার অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলে
                 জানালাতে?
মেখলা, সেই বৃষ্টিস্নাতা মিষ্টি তোমায় লুকিয়ে দেখেছিলাম
                                                 একা ছাতে।

মেখলা, তোমার ঠোঁটের নরম ঠোঁটে নিয়েছিলাম
                                        লুকিয়ে অন্ধকারে;
মেখলা, তোমার বন জোছনা রুপ চোখে হারিয়েছিলাম
                                         বারে বারে।

মেখলা, তোমার কাঠবিড়ালী-লঘু পায়ের আলসেমিতে
                                      নুপুর পরিয়েছিলাম;
মেখলা, তোমার জীবন সাথী হবার
                                      স্বপ্ন দেখেছিলাম।

মেখলা, তোমার চড়ুই পাখি চোখ
                        শান্তি দিয়েছিল
মেখলা, তোমার আলগা-খোঁপা বাঁধন খুলে
                        বৃষ্টি নেমেছিল

মেখলা, তুমি পারো নি শেষে হিসেব করতে গিয়ে
                                     আমার নারী হতে
মেখলা, তবে আজ কেন কাঁদো উপুড় হয়ে শুয়ে
                                   প্রতি রাতে?



স্বাধীনাকে


আজও তোর ছাদের বাগানে বোগেনভিলিয়া হয়ে ফুটি
     তোর আঙ্গুলের ছোঁয়া পাব বলে
আজও তোর ঠোঁটে সিগারেট হয়ে জুটি
     তোর ফুসফুসে কার্বন হয়ে জমবো বলে

আজও তোর হাতে গেলাস হয়ে তোর স্নায়ুতে, মস্তিস্কে মাদক হয়ে ছুটি,
     নেশাতুর ঘুমের রেশ
আজও সদ্য-গোঁফ-ওঠা কিশোরের চোখে মুগ্ধতা হয়ে ফুটি
     তোকে দেখি, নির্নিমেষ

বিয়ে বাড়িতে কতবার বাজারি বেলিফুল হয়েছি
     তোর চুলে জড়াবার জন্য।
গত এপ্রিলে মন্দারমুনিতে বালি হয়ে ছিলাম
     তোর পায়ের নগ্নতাকে চিনতে; বন্য,
তুই ব্যালকনিতে দাঁড়াস যখন, আজও বৃষ্টি কনা হয়ে
    তোর শরীরে আঁতিপাতি খুঁজি
        মাঝরাতে;
মেঘলা দুপুরে তুই যখন একলা উপুড়,
    তোর ঠোঁটের সব না-ফোটা-কথা বুঝি
        নিরালাতে;

তোকে জ্যোৎস্না জলে ভেজাব বলে আজও চাঁদ হয়ে উঠি
                     আকাশেতে
মানুষ নয়, অন্য কোনো শরীর নিয়ে কতবার সাজিয়েছি ঘুঁটি
                     তোর শরীর পেতে

তবু, “ভালবাসি” হয় নি বলা;
       পারিনি তোকে নিজের করে নিতে -
তুই নয়, প্রাণে ভয় ধরিয়েছে, তোর স্বাধীনতা;
       পারিনি আমার পুরুষতান্ত্রিকতাকে মেরে দিতে।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বই আলোচনা : অয়ন মণ্ডল

যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো : শক্তি চট্টোপাধ্যায় আজ প্রথম আমি আমার এক প্রিয় কবির কাব্যগ্রন্থ নিয়ে আলোচনা লিখব। জানিনা কী লিখব আর কতটুকুই বা আলোচনা করতে পারবো! শ্রদ্ধেয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের "যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো"কাব্যগ্রন্থটি নিয়ে আমি আমার আলোচনা লিখছি।। 1983 সালে এই অসামান্য কাব্যগ্রন্থের জন্য কবি সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। কবির এই অসামান্য কাব্যগ্রন্থটি বিশেষ কাব্য গুণে ভরপুর।এই গ্রন্থের নাম কবিতায় তিনি শুনিয়েছেন সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা যখন চাঁদ এবং চিতাকাঠ তাঁকে 'আয় আয়' বলে হাতছানি দেয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়,এছাড়াও এক গার্হস্থ্য পিছুটান যা কবিকে বলতে বাধ্য করেছেন--'যেতে পারি /যে-কোনো দিকেই আমি চলে যেতে পারি/কিন্তু,কেন যাবো? গভীর ভালোবাসায় তিনি সন্তানের মুখে চুমু খেয়েছেন।তিনি একাকী এই জগত্ সংসার ত্যাগ করে যেতে চান না।।তাই তো তিনি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চান। "হাত পেতে দাঁড়িয়ে"কবিতায় এক দীন মানুষকে প্রার্থনা করিয়েছেন দু মুঠো অন্যের জন্য।"বলো, ভালোবাসো "কবিতায় কবি শুধুই ভালোবাসা পেতে চেয়েছেন। ভালোবাসা যতই হোক না কেন ছুঁচের ম

তরুণ কবির সাক্ষাৎকার : শুভ্রা মুখার্জী

যা আমাদের সমৃদ্ধ করে সেটাই শিল্প : শুভ্রা মুখার্জী (প্রথম দশকের তরুণ কবি শুভ্রা মুখার্জী র সাথে খোলামেলা আড্ডায় প্রথম দশকের আরেক তরুণ কবি শুভম চক্রবর্তী) শুভম চক্রবর্তী : কবিতা লেখার শুরুটা কিভাবে ? শুভ্রা মুখার্জী : কবিতা লেখার শুরুটা খুব হুট করেই ২০১৫ থেকে। এর আগে একটা পূর্বপ্রস্তুতি আর জেদের গল্প আছে, আর একটা মারাত্মক প্যাশান।  এসব থেকেই লেখার সূত্রপাত। শুভম : বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম শুশুনিয়া থেকে শিল্পশহর দুর্গাপুর হয়ে মহানগরের পেটে লীন হওয়া অভিযাত্রা কিভাবে বদলেছে কবিতাকে ? শুভ্রা : প্রথমত আমার বাড়ি শুশুনিয়ার থেকেও বেশ কিছুটা দূরের একটি গ্রামে। সেখানে মাধ্যমিক অবধি কাটানো,তার পরবর্তী সময় কেটেছে দুর্গাপুর আর বর্ধমানে।কলকাতা আমাকে এখনও তেমন প্রভাবিত করতে পারে না। এত কোলাহলে আমি হারিয়ে যাই শুধু। লিখতে গেলেই শিল্পশহরের রাস্তায় বা বীরভূমের লালমাটিতে নিজেকে খুঁজে পাই।আর অবশ্যই শৈশব কাটানো আমার বাঁকুড়ার গ্রামের গন্ধে কিছুটা বুঁদ হয়ে থাকি। শুভম : শিল্প কি ? শুভ্রা : যা আমাদের সমৃদ্ধ করে সেটাই শিল্প।  শুভম : কবি অংশুমান কর একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন --কবিতা হলো যৌনতাপ্রয়াস

তরুণ কবির সাক্ষাৎকার : ইন্দ্রনীল তেওয়ারী

আমি আজও ছাপানো পত্রিকার পক্ষে : ইন্দ্রনীল তেওয়ারী (প্রথম দশকের তরুণ কবি ইন্দ্রনীল তেওয়ারীর সঙ্গে রাখঢাকহীন আড্ডায় প্রথম দশকের আরেক তরুণ কবি শুভম চক্রবর্তী) শুভম চক্রবর্তী : কেমন আছো কবি ইন্দ্রনীল তেওয়ারী? ইন্দ্রনীল তেওয়ারী : কবি! কবে কে মোরে, শবদে শবদে বিয়া দেয় যেই জন। অ্যাঁ! এদিকে নিজেরই বিয়ে হচ্ছে না আবার বলছ ঘটকালি করি? এ আচ্ছা ঝকমারি। তবে আছি ভালো। শুভম : কিছু লোক থাকে যারা আজন্ম কবিতায় নিবেদিত। আর কিছু লোক ঘরসংসার- চাকরি বাকরি সমস্ত গুছিয়ে কবিতা লিখতে আসে। তুমি দ্বিতীয় দলের লোক। এ ব্যাপারে তোমার নিরপরাধ স্বীকারোক্তিও প্রত্যক্ষ করেছি। কি বলবে এ বিষয়ে? ইন্দ্রনীল : হ্যা। আমি দ্বিতীয়  দলের লোক। বস্তুত আমার মতে বাংলাভাষায় যারা কবিতা লিখবে তাদের আমি বলব আগে খাওয়া পড়ার একটা পার্মানেন্ট ব্যবস্থা করে নাও তারপর লেখ। দেখো এরকম বলার কিছু কারন আছে। একটা তো আন্দাজ করতেই পারো। কবিতা লিখে টাকা পয়সা নেই একেবারেই। অমূল্য বলে অ মুল্যে নেয় লোকে। এছাড়াও প্রধান কারন কিছু আছে। আসলে কবিতা একটা নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। আমার  মতে প্রতিটি মানুষের ভেতরে কবিতা চলতেই থাকে। এবার কবি শুধুমাত্র কবিতাটিকে প